বাংলাদেশের জন্য ৮ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা অনুমোদন বিশ্বব্যাংকের
 প্রকাশিত: 
                                                ২৯ মে ২০২৪ ১৫:০৯
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৪৯
                                                
 
                                        বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে মৌলিক সেবা ও সুযোগ দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দুটি প্রকল্পের আওতায় ৭০ কোটি ডলার ডলার অনুমোদন করেছে তারা, যা স্থানীয় মুদ্রায় আট হাজার ২৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ১১৭.৬৫ টাকা ধরে)।
বুধবার (২৯ মে) বিশ্বব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের পর্ষদ বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য মৌলিক সেবা দিতে এই অর্থ অনুমোদন করে। ২০১৭ সাল থেকে সহিংসতার কবলে পড়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এটি বিশ্বের বৃহত্তম জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির সংকটগুলোর মধ্যে একটি।
বাংলাদেশ এবং ভুটানে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, আমরা প্রায় এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের উদারতাকে বিশেষভাবে প্রশংসা করি। আমরা স্থানীয় আশ্রয়দাতা গোষ্ঠীর ওপর ব্যাপক চাপের বিষয়টিও উপলব্ধি করি। এই সংকট ইতোমধ্যে সাত বছরে পদার্পণ করেছে এবং তাদের স্বল্পমেয়াদি ও জরুরি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও টেকসই সমাধান অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। আমরা এই জটিল সংকট মোকাবিলায় এবং রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কল্যাণে বাংলাদেশ সরকারকে সাহায্য করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সংকটের সাত বছরে পদার্পণের এই সময়ে ৩৫ কোটি ডলারের “ইনকুলুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন (আইএসও)” প্রকল্প এবং ৩৫ কোটি ডলারের “হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহান্সমেন্ট অফ লাইভস (হেল্প)” প্রকল্প দুটি বাংলাদেশি আশ্রয়দাতা এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করবে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের “আইডিএ-২০ উইন্ডো ফর হোষ্ট কমিউনিটিজ অ্যান্ড রিফিউজিস”-এর আওতায় অনুদান হিসেবে এই অর্থায়ন করা হবে।
“ইনকুলুসিভ সার্ভিসেস অ্যান্ড অপরচুনিটিজ ফর হোস্ট কমিউনিটি অ্যান্ড ডিসপ্লেসড রোহিঙ্গা পপুলেশন” প্রকল্পটি রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অন্তত নয় লাখ ৮০ হাজার মানুষের জীবিকা ও অপরিহার্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা এবং জেন্ডার সহিংসতা মোকাবিলা ও প্রতিরোধ সেবার জন্য বিনিয়োগ করবে। প্রকল্পটি ১২ বছরের কম বয়সী তিন লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে শিক্ষা দেওয়াসহ মানব পুঁজি উন্নয়নে বিনিয়োগ করবে।
আইএসও প্রকল্পের টাস্ক টিম লিডার এস. আমের আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে বাস্তুচ্যুতির যে সংকট মোকাবিলা করছে, সেটি আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠী হোক আর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীই হোক, শেষ পর্যন্ত মানুষকে সহায়তার চ্যালেঞ্জ। আইএসও প্রকল্প অস্থায়ী কাজ, প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা এবং জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতা মোকাবিলা ও প্রতিরোধ সেবা প্রদানে বিনিয়োগ করতে, সুরক্ষা দিতে এবং মানব পুঁজি ব্যবহার করতে উভয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্য করবে।
“হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)” প্রকল্প রোহিঙ্গা এবং আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অন্তত ছয় লাখ ৪৫ হাজার মানুষের মৌলিক সেবাসমূহ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটাবে এবং তাদের সহিষ্ণুতা বাড়াবে। পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন; জলবায়ুসহিষ্ণু সড়ক; নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রের জরুরি বিনিয়োগ চাহিদা ও মেটাতে সাহায্য করবে, যা উৎপাদনশীল জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। টেকসই অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং দীর্ঘমেয়াদি দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি সরকার এবং জনগণ উভয় পর্যায়ে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দক্ষতা তৈরিতেও গুরুত্ব দেবে।
হেল্প প্রকল্পের বিশ্বব্যাংকের টাস্ক টিম লিডার স্বর্ণা কাজী বলেন, দুর্যোগ এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এই সংকট দীর্ঘায়িত হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী খুব ঘনবসতিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করে এবং তারা সামান্য মৌলিক সেবা পেয়ে থাকে। তাদের আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীও চাপের মধ্যে রয়েছে। তাদের সীমিত সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ অব্যাহত রয়েছে। “হোস্ট অ্যান্ড রোহিঙ্গা এনহান্সমেন্ট অব লাইভস (হেল্প)” প্রকল্পটি অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোর সহিষ্ণুতা জোরদারে বিনিয়োগ করবে এবং এগুলোকে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণ করতে ও টেকসই রাখতে কাজ করবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, বাংলাদেশে থাকা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী ও শিশু এবং তাদের অর্ধেকের বয়স ১৫ বছরের নিচে। দুটি প্রকল্পই নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর ওপর সংকটের ভিন্ন ধরনের প্রভাবকে বিবেচনায় রেখেছে। জেন্ডার- ভিত্তিক সহিংসতা; নিরাপদ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার-স্পর্শকাতর ও জলবায়ু সহিষ্ণু স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, নিরাপত্তার জন্য সৌর বিদ্যুতের সড়ক বাতি এবং কমিউনিটিভিত্তিক দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ওপর নারীদের জন্য প্রশিক্ষণসহ নারী ও শিশুদের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে প্রকল্প দুটিতে সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম রয়েছে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: