রবিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০শে ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কলেজ গেটে ঝুলছে স্ক্রিনশট

ছাত্রীদের অধ্যক্ষের আপত্তিকর মেসেজ 


প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৩৫

আপডেট:
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৩২

ছবি : সংগৃহীত

নওগাঁয় ছাত্রীদের আপত্তিকর মেসেজ পাঠানোসহ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হকের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ছাত্রীদের সঙ্গে ওই অধ্যক্ষের সেই সব মেসেজের স্ক্রিনশট রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) কলেজের প্রধান গেটে ঝুলিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় রোববার বেলা ১১টার দিকে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে নওগাঁ সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ, প্রশাসনিক কাজে অপারগতা ও প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করায় কলেজের উপাধক্ষ্য অধ্যাপক এস এম মোজাফফর হোসেন এবং শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মনিরুজ্জামান বিদ্যুৎতের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি তুলে ধরেন। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনায় দাবি পূরণের আশ্বাস না পাওয়াই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

এদিকে শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে অধ্যক্ষ সামসুল হক তার ব্যবহৃত ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছিল এবং স্ক্রিনশটের ব্যপারে সবাইকে বিচলিত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে তার ব্যক্তিগত আইডিতে একটি পোস্ট করেন।

নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথনের স্ক্রিনশটগুলো ভাইরাল হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে জেলার সচেতন মহলে। এতে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরাও। ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটগুলো যাচাই সাপেক্ষে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থ্যা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া স্ক্রিনশটগুলোর একটিতে দেখা যায়, অধ্যক্ষ সামসুল হক তার ছাত্রীর সৌন্দর্যের প্রশংসা করছেন। প্রশংসার এক পর্যায়ে ছাত্রীকে সামসুল হক লিখেন, “আরো সুন্দরী ছবি আছে তোমার”। উত্তরে ওই শিক্ষার্থী বলেন, “আর নেই স্যার। আমি সুন্দর না। আমার যা মনে হয়”। সামসুল হক লিখেন, “আছে আছে। ওড়না ছাড়া”। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, “নেই স্যার। স্যরি স্যার”। তাৎক্ষণিক সামসুল হক বলেন, “কলেজে দেখেছি তো”। উত্তরে শিক্ষার্থী বলেন, “না স্যার। স্যরি। নেই স্যার। মাফ করবেন”। এরপর সামসুল হক বলেন, “ওকে। সামনেই দেখবো। অনেক অনেক অনেক ভালো থেকো। বাই”।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী বলেন, মেসেঞ্জারের এই কথোপকথন ২ বছর আগের। ওই সময়ে বিএমসি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন সামসুল হক স্যার। সেখানে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কলেজে যাতায়াতের সময় প্রায়ই উনি (অধ্যক্ষ) আমার সঙ্গে কথা বলতেন। এভাবে একদিন আমার সঙ্গে ফেইসবুকের বন্ধু তালিকায় যুক্ত হন। এরপর ফেইসবু স্টোরিতে কোনো ছবি দিলে অশ্লীল মন্তব্য করতেন। এক পর্যায়ে উনি আমার কাছে থেকে ওড়না ছাড়া ছবি চান। ওই মুহূর্তে তাকে ব্লক করে স্ক্রিনশট রেখে দেই।

এতোদিন নীরব থাকার কারণ জানতে চাইলে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, বিএমসি কলেজ থেকে নওগাঁ সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে বদলি হয়ে আসেন সামসুল হক। এদিকে ২০২৪-২৫ সেশনে এখানে ভর্তি হতে হয়েছে আমাকেও। তাই শত চেষ্টা করেও ভয়ে এতোদিন নীরব ছিলাম। হঠাৎ ফেইসবুকে সামসুল স্যারের সঙ্গে কয়েকজন ছাত্রীর স্ক্রিনশট ভাইরাল হতে দেখে আমিও প্রতিবাদ জানালাম। উনি (অধ্যক্ষ) অনেক ছাত্রীর সঙ্গে এমন অন্যায় করেছেন।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই এখানকার সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে আমি জড়িত। কলেজে নাচের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করার একদিন পর প্রিন্সিপাল স্যার আমাকে ফেইসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠায়। রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করার পর মাঝেমধ্যেই স্যার আমাকে মেসেজ পাঠাতেন। এরপর কোথাও দেখা হলেই উনি (অধ্যক্ষ) আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকিয়ে সৌন্দর্যের প্রশংসা করতেন। তার কথাবার্তাসহ তাকানোর ধরন পুরোটাই অশ্লীল।

ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশট এবং কলেজের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে নওগাঁ সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, নওগাঁ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম করেন উপাধ্যক্ষ এসএম মোজাফফর হোসেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বিদ্যুৎ স্যারকে সঙ্গে নিয়ে। এগুলো নিয়ে কথা বলার জন্য বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখায় এগুলো আমরা জানি, কিন্তু বর্তমানে যেভাবে আমরা দেখছি অধ্যক্ষ বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ ও ম্যাসেজ করেছে। তা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে ও অধ্যক্ষ তা স্বীকার করেছে এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নেই এমন কলেজ প্রশাসনের কাছে। এর আগেও নারীঘটিত অনেক ঘটনা ছিল তার বিরুদ্ধে। এমন অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের আমরা চাই না।

নওগাঁ সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদনান সাকিব বলেন, শিক্ষকরা হচ্ছেন আমাদের পিতার সমতুল্য। সেই শিক্ষক যখন তার মেয়ের বয়সী একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ ধরনের কথা বলে এবং আবদার করে তখন সে আর শিক্ষক থাকতে পারে না। আমরা অবিলম্বে এই অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই। তার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ অধ্যাপক সামসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ক্রিনশটের বিষয় কোনো মন্তব্য করতে চাই না। গুটিকয়েক শিক্ষার্থীকে কখনো প্রতিপক্ষ মনে করি না। যারা আমার বিষয়ে আন্দোলন করছে তাদেরকে আমি শিক্ষার্থী হিসেবেই দেখতে চাই।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top