বুধবার, ২৭শে আগস্ট ২০২৫, ১২ই ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


কন্টেইনার জট কমাতে স্টোররেন্ট স্থগিত করল চট্টগ্রাম বন্দর


প্রকাশিত:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১১:৪০

আপডেট:
২৭ আগস্ট ২০২৫ ১৪:৪৬

ছবি ‍সংগৃহিত

আমদানি করা এফসিএল (ফুল কন্টেইনার লোড) কন্টেইনারে চলমান চার গুণ স্টোররেন্ট আদায়ে ছাড় দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) চবকের পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর এবং ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে প্রযোজ্য, পানগাঁও আইসিটিতে চলতি বছরের ১০ মার্চ চার গুণ হারে স্টোররেন্ট আরোপ করা হয়। তবে নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান ও বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম গতিশীল রাখার স্বার্থে ২৩ আগস্ট ২০২৫ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত এফসিএল কন্টেইনারের ওপর চলমান চার গুণ স্টোররেন্ট স্থগিত করা হয়েছে। তবে খালি কন্টেইনারের ক্ষেত্রে এ স্থগিতাদেশ কার্যকর হবে না।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিজিএমইএ) বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের অনুরোধে বন্দর কর্তৃপক্ষ এই স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তাই চবক আমদানিকারকদের দ্রুত তাদের কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় থাকে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি ও কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমান বলেন, আমরা কখনো বাড়ানোর বিপক্ষে ছিলাম না। তবে বলেছিলাম, একটু আলোচনা করে বাড়ান। কয়েকটি মিটিংও হয়েছিল। আসলে চট্টগ্রাম বন্দরকে আমরা যতই বকা-ঝকা করি না কেন, ওদের হাত-পা বাঁধা। এনবিআর ও আমাদের জ্বালায় ওরাও এক হিসেবে কিছু করতে পারে না।

সেলিম রহমান আরও বলেন, এটি ঠিক যে, গার্মেন্টস মালিক যদি সচেতন হয় তাহলে সে কখনো বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেইনার ফেলে রাখবে না। বন্দর তাদের জট নিরসনে এ আদেশ দিয়েছিল। তবে এক মাসের জন্য যে তারা বাড়তি স্টোররেন্টে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, আমরা সেটিকে স্বাগত জানাই।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জট কমাতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধারণক্ষমতা বাড়ানো, পুরনো শেড সংস্কার করা, ইয়ার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার মতো উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫৩ হাজার টিইইউএস থেকে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার টিইইউএস-এ উন্নীত হয়েছে।

সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে পুরাতন ইয়ার্ড জেনারেল কার্গো বার্থে কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ১৯ হাজার ৮০৮ টিইইউএস। আর সবচেয়ে আধুনিক ইয়ার্ড এনসিটির ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৮৭৬ টিইইউএস। এর বাইরে চট্টগ্রাম কন্টেইনার টার্মিনালে ৮ হাজার ৩৭৬, নিউমুরিং ওভারফ্লো ইয়ার্ডে ৬ হাজার, সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ডে ৩ হাজার এবং নর্থ কন্টেইনার ইয়ার্ডে ২ হাজার ৪৫৮ টিইইউএস কন্টেইনার রাখা যায়। এই ৬টি ইয়ার্ডে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা থাকলেও তা বর্তমান সময়ের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে একেবারেই নগণ্য।

এমএসসি শিপিং লিমিটেডের হেড অব অপারেশন আজমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, বন্দরের হ্যান্ডলিং ও স্টোরেজ সক্ষমতা বৃদ্ধির গতি ব্যবসার বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যার কারণে জাহাজের বার্থিংয়ে সংকট দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থায় কন্টেইনার জট নিরসনে পরিত্যক্ত শেডগুলোকে ইয়ার্ডে রূপান্তরের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে বন্দরের বাইরে এক্স-ওয়াই শেডে কন্টেইনার এনে রাখা হচ্ছে। এছাড়া প্রস্তুত করা হচ্ছে পুরাতন অকশন শেড, গাড়ি সংরক্ষণ শেড এবং ব্যাগেজ শেড। অন্তত ৬ হাজার বাড়তি কন্টেইনার এসব শেডে রাখা সক্ষমতা রয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মাত্র ৬টি কন্টেইনার ওঠানামার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করা চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা এখন ৬০ হাজারের কাছাকাছি। এদিকে বন্দরের অব্যবহৃত জায়গাগুলোতেও কন্টেইনার রাখার প্রক্রিয়া চলছে। বিভিন্ন স্থানে চলছে নতুন ইয়ার্ড নির্মাণের তোড়জোড়। চলতি বছর ৪ হাজার ধারণ ক্ষমতার আরও একটি শেড তৈরি হবে। সেইসঙ্গে তৈরি হবে রফতানিমুখী ৬ হাজার কন্টেইনারের আরেকটি নতুন শেড।

নতুন শেড তৈরি এবং পুরনো শেডগুলো সংস্কারের মাধ্যমে কন্টেইনার রাখার সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী, অস্থায়ীভাবে জিসিবি, পিসিটি, লালদিয়া, বে টার্মিনাল ইত্যাদি ইয়ার্ডে কন্টেইনার রাখা হচ্ছে। এরপরও সক্ষমতা না থাকায় অনেক সময় কন্টেইনারগুলো বন্দরে জমে থাকে। এর জন্য কিছু কিছু আমদানিকারকেদের গাফিলতি দেখছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে এখন স্টোররেন্ট অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন আমদানিকারকরা। ফলে এক মাসের জন্য বাড়তি স্টোররেন্ট স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

রিলায়েন্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিক লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক ওয়াহেদ আলম বলেন, গেট সিস্টেম আরও সহজ করতে হবে এবং দ্রুত প্রবেশ-বাহিরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ৫৯ হাজার ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে বর্তমানে কন্টেইনার রয়েছে ৪৩ হাজার ৪৪৮ টিইইউএস। এর বাইরে কন্টেইনারবাহী ১৩টি জাহাজের অবস্থান রয়েছে বন্দরের প্রধান জেটি ও বহিঃনোঙ্গরে।

তিনি বলেন, কন্টেইনার ধারণ সক্ষমতা বাড়ানো হলে আমদানি ও রফতানিকারকরা আশ্বস্ত হবেন। তাদের কন্টেইনার সময়মতো ডেলিভারি পাওয়া নিশ্চিত হবে এবং কোনো ধরনের দেরি বা অসুবিধার মুখোমুখি হতে হবে না।

উল্লেখ্য, বছরে বন্দরে কন্টেইনার ওঠানামা করছে ৩২ লাখের বেশি। তবে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের পাশাপাশি সুশৃঙ্খল ট্রাফিক সিস্টেম নিশ্চিত করে বন্দরের বাইরের ইয়ার্ডগুলোর কার্যক্রম শুরু করার পরামর্শ বন্দর ব্যবহারকারীদের।

এসএন/রুপা


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top