জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত জামালপুর পৌরসভা, নেই জানাজার জায়গাও
প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৩:১৫
আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৩:১৬

জামালপুর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হাটচন্দ্রা, পলাশতলা, বগলাবাড়ি ও কাজিরআখ এই চারটি এলাকাজুড়ে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকায় সাধারণ মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জামালপুর স্টেডিয়াম থেকে চন্দ্রা বিজিবি রেলক্রসিং পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল সড়কটি প্রায় ৩ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন জরুরি রাস্তাটিও পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় সেখানে সপ্তাহব্যাপী ন্যালো মেশিন দিয়ে পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জলাবদ্ধতার কারণে মৃত ব্যক্তিদের জানাজা এলাকার মধ্যে পড়ানো সম্ভব হয় না। বাধ্য হয়ে মিয়াবাড়ি মাদ্রাসা মাঠ বা বিশ্বরোডের শুকনো জায়গায় জানাজা নামাজ আদায় করতে হয়। এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে গত তিন বছর ধরে একাধিকবার জেলা প্রশাসক ও পৌর কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান এবং মানববন্ধন করেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পায়নি এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বর্ষাকালে প্রায় ৬ মাস ধরে ১৫০০-র অধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট কোমর পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এতে গর্ভবতী নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষদের চলাফেরা এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তারা আরও বলেন, জমে থাকা পানিতে ভেসে থাকা আবর্জনা ও দুর্গন্ধে পরিবেশ হয়ে উঠেছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি পানি নিষ্কাশনের স্বাভাবিক পথ বন্ধ করে গড়ে তুলেছেন হাঁস-মুরগি ও গরুর খামার এবং মৎস্য চাষ প্রকল্প। ফলে ব্রিজ-কালভার্ট থাকলেও তা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হারেজ আলী বলেন, বৃষ্টির ছয় মাস আমরা পানিতে ডুবে থাকি। কেউ মারা গেলে জানাজা দেয়ার জায়গাও থাকে না।
সাবেক কাউন্সিলর মোছা: জয়বানু, মোহসিন আলী, বাদশা মিয়া, শাহজাহান আলী, জয়নাল আবেদিন ও ময়নাল হোসেনসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে হাজার একর ফসলি জমি অনাবাদী পড়ে থাকে। এলাকার শিশুরা ঠিকমতো স্কুলেও যেতে পারে না।
তাদের দাবি, এই মুহূর্তে যদি পাকা ড্রেন নির্মাণ সম্ভব না হয়, তবে অন্তত কাঁচা ড্রেন করে অথবা পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করে সাময়িক সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) জানান, তারা স্মারকলিপি পেয়েছেন এবং বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু করা হবে।
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক হাছিনা বেগমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: