রবিবার, ১৭ই আগস্ট ২০২৫, ২রা ভাদ্র ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


প্রত্যাবাসনের ‘কঠিন স্বপ্ন’ বাস্তবায়নে রোহিঙ্গারা নির্বাচিত করলেন ৫ নেতা


প্রকাশিত:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১১:১০

আপডেট:
১৭ আগস্ট ২০২৫ ২০:৩৭

ছবি ‍সংগৃহিত

মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। সে সময়ে প্রায় ৮ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় পান। সব মিলিয়ে এখন সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ লাখের বেশি।

আরকিছু দিন পর এই সংকটের ৮ বছর পূর্ণ হতে চললেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

সাম্প্রতিক সময়ে আরকান আর্মির রাখাইনে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জান্তার সঙ্গে সংঘাত, ত্রাণ তহবিল কমে যাওয়াসহ নানা কারণে প্রত্যাবাসনের স্বপ্ন ‘কঠিন’ হয়ে পড়েছে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠীর কাছে।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিজেদের মর্যাদা, অধিকার ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আকাঙ্খা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গারা অনানুষ্ঠানিক ভোটের মাধ্যমে নিজেদের মতপ্রকাশ করে পাঁচজন নেতাকে নির্বাচিত করেছেন।

শনিবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি কমিউনিটি সেন্টারে সামাজিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন ধাপের মাধ্যমে ভোটে নির্বাচিত পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেছেন, কিছুদিন আগে একটি নাগরিক সমাজ সংগঠন গঠনে অনুমতির জন্য আমাদের কাছে তারা (রোহিঙ্গারা) আবেদন করেছিলেন এবং আমরা এটি অনুমোদন করেছি।

গত ১৬ জুলাই উখিয়ার ১৪ থেকে ১৬নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে গঠিত জোনের মতামত প্রদানকারীদের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম দিয়ে শুরু হয় এই প্রক্রিয়া।

গেলো একমাসে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পকে ৮টি জোনে ভাগ করে চলে এই কার্যক্রম এবং ৩ হাজার ৫০০ জন রোহিঙ্গা তাদের মত দিয়ে নির্বাচিত করেন ৫০০ জন কাউন্সিলরকে।

পরবর্তীতে এই ৫০০ জন কাউন্সিলরের মতামত থেকে চূড়ান্ত নির্বাহী কমিটির জন্য ২৬ জনকে মনোনীত করা হয় এবং সর্বশেষ শনিবার তাদের মতামতের ভিত্তিতে পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচিতরা হলেন—১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ, ১৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খিন মং, ১নং/ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জাহাঙ্গীর আলম, ১নং/ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মোহাম্মদ শোয়াইফ এবং ১৫নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাজেদা বেগম।

এদের মধ্যে মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ, মোহাম্মদ শোয়াইফ ও সাজেদা বেগম রাখাইনের বুথিডং টাউনশিপের (জেলা) বাসিন্দা এবং খিন মং ও জাহাঙ্গীর আলম মংডু টাউনশিপের বাসিন্দা।

নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি শিক্ষক মাস্টার মোহাম্মদ কামাল। উপস্থিত নির্বাহী কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচিতদের মধ্যে প্রথমে মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ প্রথম ছয় মাস এবং বাকিরা পর্যায়ক্রমে ছয় মাস করে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পভিত্তিক নতুন এই সিভিল সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন।

নির্ধারিত সময়কালে একজন প্রধান থাকলেও বাকিরা তাকে সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন মাস্টার কামাল।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মৌলভি সৈয়দ উল্লাহ ছিলেন প্রত্যাবাসন চাইতে গিয়ে প্রাণ হারানো প্রয়াত রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহর সংগঠন আরকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের অন্যতম সদস্য। এ ছাড়া তিনি বিগত সময়ে ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের দাবিতে আয়োজিত 'গো হোম ক্যাম্পেইন' এর মতো কর্মসূচিগুলোতে সম্মুখভাগে ছিলেন।

সৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য হলো অধিকার, মর্যাদা এবং সমতার সঙ্গে নিজেদের মাতৃভূমি আরাকানে ফেরার স্বপ্ন পূরণ করা। সে লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে নতুন এই যাত্রা শুরু করেছি।

আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা আজীবন বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের সরকার প্রধান (প্রধান উপদেষ্টা) ও নোবেল জয়ী ড. ইউনূস গত রমজানে আমাদের সঙ্গে ইফতার করেছেন এবং বক্তব্যে আমাদের প্রত্যাবাসন স্বপ্নকে নতুন মাত্রা দিয়েছেন।

নির্বাচিতদের মধ্যে রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী খিন মং বলেন, আমাদের দায়িত্ব হলো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে যুক্ত থাকা, ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখা এবং শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এগিয়ে যেতে আমরা সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখবো।

নতুন এই প্রতিনিধি সংগঠনকে স্বাগত জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। মোহাম্মদ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক বলেন, এটি আসলেই আমাদের জন্য ভালো খবর, অন্তত এবার আশা রাখছি, তারা তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদের কমিউনিটির উন্নতির জন্য দারুণ কিছু করবেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে মন্তব্য ও পোস্টের মাধ্যমে ক্যাম্পের নতুন নেতৃত্বকে অসংখ্য রোহিঙ্গাকে অভিনন্দন জানাতে দেখা গেছে।

এ ছাড়া এই বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের 'প্রতিশ্রুতিশীল' এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে আরকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল কংগ্রেস।

বিবৃতিতে সংগঠনটির সভাপতি ও বুথিডংয়ের সাবেক এমপি শেউয়ে মং- শুভকামনা জানানোর পাশাপাশি আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে নির্বাচিতদের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেছেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top