সোমবার, ১১ই আগস্ট ২০২৫, ২৭শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


স্ত্রীকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল


প্রকাশিত:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১০:৫২

আপডেট:
১১ আগস্ট ২০২৫ ১৯:০১

ছবি সংগৃহীত

শেরপুরের শ্রীবরদীতে অসুস্থ স্ত্রীকে মাটিতে পুঁতে ফেলার চেষ্টার এক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা ছাপিয়ে এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বৃদ্ধ স্বামীর শাস্তিও দাবি করেন অনেকে। কিন্তু সরজমিনে তথ্য পাওয়া যায় ভিন্ন। স্থানীয়দের দাবি, নাতির ভিউ ব্যবসার বলি হয়েছেন নানা। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে চম্পট নিয়েছেন নাতি।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, বৃদ্ধ দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে এক ছেলে ও এক মেয়ে প্রবাসে থাকেন। অপর এক মেয়ে অন্ধ থাকায় তিনি রাজধানীতে ভিক্ষাবৃত্তি করেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে অসুস্থ স্ত্রীর একাই সেবা করতে গিয়ে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত বৃদ্ধ তার স্ত্রীর প্রাকৃতিক কাজ সাড়ার জন্য কিনে আনেন প্লাস্টিকের একটি কমোড চেয়ার। শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিকেলে সেই চেয়ার ব্যবহারের জন্য উঠানে গর্ত করেন শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর কানিপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান। এসময় তার স্ত্রী বিছানায় প্রাকৃতিক কাজ সেড়ে ফেললে ক্ষোভে স্ত্রীকে টেনে-হিচড়ে ওই গর্তে কাছে নিয়ে এসেছেন, এ দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন বৃদ্ধের নাতি খোকন মিয়া।

খোকন মিয়া তার নানীকে উদ্ধার না করে ভিডিও ধারণ করেন এবং তার নানাকে বিভিন্নভাবে প্ররোচণা দেন। বৃদ্ধার চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেন। ফেসবুকে ইনকামের আশায় সেই ভিডিওটি নিজের ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেন খোকন মিয়া। সামান্য বিষয়কে বড় করার জন্য খোকন মিয়ার শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা। আর বিষয়টি জানাজানির পর হতে পালিয়েছেন নাতি খোকন মিয়া।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে খলিল তার স্ত্রী খোরশেদাকে সেবা করলেও কখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। নিজের হাতে স্ত্রীকে গোসল করানো, খাবার তৈরিসহ নানা রকম সেবা করেন। তবে এত দীর্ঘ সময় নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থেকে খলিলও কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন। তাই এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।

এ ঘটনায় ‍দুঃখপ্রকাশ করে খলিলুর রহমান বলেন, আমি ছাড়া আমার স্ত্রীর আর কেউ নেই। প্রায় ১০ বছর ধরে সে অসুস্থ হয়ে বিছানায় প্রাকৃতিক কাজ সাড়েন। আমি প্রতিদিন সেগুলো পরিষ্কার করি। কখনও আমি তাকে অবহেলা করিনি। শুক্রবার আমি একটি কমোড চেয়ার কিনে আনি। সেই চেয়ারটি উঠানে বসানোর জন্য গর্ত করতে থাকি। এসময় আমার স্ত্রীর প্রাকৃতিক ডাক এলে তাকে আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার কথা বলি। কিন্তু সে বিছানায় তা করে দেয়। এবিষয়টি নিয়ে আমি হঠাৎ রাগে, ক্ষোভে তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে এঘটনা ঘটাই। আমি এ বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত।

বিষয়টি নিয়ে উদ্ধেগ প্রকাশ করেন মানবাধিকার কর্মীরাও। সৃষ্টি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান আনোয়ার-ই-তাসলিমা বলেন, আমাদের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। মূলত নাতি তার বৃদ্ধ নানাকে এমন কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছে কেবল ফোনে ভিডিও করে ভিউ বাড়ানোর জন্য। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সেই খলিল দম্পতির পাশে নেই তার সন্তানরা, যা সামাজিক অবক্ষয়।

শ্রীরবদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের হোসেন জানান, ঘটনার কথা জানতে পেরে আমি সকালে খলিলুর রহমানের বাড়িতে গিয়েছি। তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। মূলত তিনি তার স্ত্রীকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে সেবা করে আসছেন। অপরিচ্ছন্ন, নোংরা আর দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে থেকে তিনিও কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। আমরা চেষ্টা করছি ওই দম্পতিকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top