শনিবার, ৯ই আগস্ট ২০২৫, ২৫শে শ্রাবণ ১৪৩২

Shomoy News

Sopno


খুলনায় কেজিতে ২৫ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম


প্রকাশিত:
৯ আগস্ট ২০২৫ ১২:২২

আপডেট:
৯ আগস্ট ২০২৫ ১৯:১৬

ছবি সংগৃহীত

থরে থরে সাজানো। নেই কমতি। তবুও অদৃশ্য কারণে বাড়ছে দাম। তবে কি মজুদ সিন্ডিকেট? নাকি অসাধু উপায়ে দাম বাড়ানোর কৌশল—এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্রেতাদের মাঝে। দিন যত যাচ্ছে, বাড়ছে দামও। গেল দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনায় কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

হাত ঘুরলেই যেন বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে সরবরাহ কম। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন তারা। ক্রেতাদের অভিযোগ মজুদ সিন্ডিকেট আর ঠুনকো অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে পেঁয়াজের দাম।

নগরীর খালিশপুর, দৌলতপুর, নিউ মার্কেট, ময়লাপোতা, জোড়াকল বাজার, নতুন বাজার ও বয়রা ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুচরায় বাজারভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে। অন্যদিকে সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজারের আড়তে সেই পেঁয়াজ ৬২-৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দামের ব্যবধান ১২-১৩ টাকা। এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ।

কেডিএ নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা হারুন অর রশীদ বলেন, ৫০-৬০ টাকার পিঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা তো কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। এটা মজুদের কারণে নাকি বন্যার কারণে বাড়ানো হয়েছে।

তিনি বলেন, আয়ের উপরে তো আমাদের সংসারিক একটি বাজেট আছে। ব্যয়েরও সীমা আছে। আর্থিক সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে আমাদের চলতে হয়। যখনই বাজেট ছাড়িয়ে যাবে বা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তো পারিবারিক অসুবিধা হয়। আগে যা কিনতাম, এখন তা কমিয়ে কিনতে হবে। এর বিকল্প নেই।

ওই বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা শুকুর আলী বলেন, এলসির পেঁয়াজ থাকলে দেশি পেঁয়াজেরও দাম কম থাকতো। গোলায় পেঁয়াজ আছে অনেকে নামাচ্ছে না। অল্প অল্প নামাচ্ছে, দাম বেশি হলে বিক্রি করছে। তিনি আরও বলেন, আমি সামান্য বেতনে কাজ করে পেঁয়াজ কিনব, মাছ কিনব নাকি তরকারি ও চাল কিনব? গরীব মানুষের খুব কষ্ট।

খালিশপুর চিত্রালী বাজারের ক্রেতা আব্দুর রশিদ বলেন, গরীবের যতো জ্বালা। আগে পাটকলে কাজ করতাম। মিল বন্ধ এখন দিনমজুরির কাজ করি। বৃষ্টির কারণে ঠিকমতো কাজও হয় না। এর মধ্যে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি। পেঁয়াজ, মরিচ আর সবজি কিনবো, নাকি চাল-তেল। আর মাছ মাংস তো দূরের কথা। এরমধ্যে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অল্প হলেও তো কিনতে হবে। দাম বাড়ার বিষয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মনিটরিং করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সোনাডাঙ্গা পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আরাফাত আবাসিক প্রকল্পের খুচরা বিক্রেতা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, পাইকারিবাজার থেকে ৬৮ টাকা কজিতে ১৫ কেজি পেঁয়াজ কিনেছি। দাম কম ছিল। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। হয়তো এটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ছে, না হলে বর্ষার জন্য।

তিনি আরও বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ গরিব। আয় নেই বললেই চলে। আর বর্ষার মৌসুমে কোনো কাজ-কাম নেই। জীবন-জীবিকা খুবই দুর্বিষহ। ক্রয় ক্ষমতা নেই বললেই চলে। কারণ তাদের কাজ নেই, আয়ও নেই। বেকার আছে এবং দিনমজুরের সংখ্যা বেশি।

খালিশপুরের খুচরা বিক্রেতা সোহাগ বলেন, সীমিত লাভ রেখেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, তাই আমাদেরও বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজ মানভেদে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দুই সপ্তাহ আগেও ৫০-৫৫ টাকায় বিক্রি করেছি।

কেডিএ নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের বিক্রেতা মহাদেব সাহা বলেন, এখন পেঁয়াজের মৌসুম শেষের দিকে। এই সময়ে দাম কিছুটা বাড়ে। তারপর ঘন বর্ষা। দীর্ঘদিন মাল ওঠে না, আমদানিও কম। এই কারণে দাম একটু বেশি। অতিরিক্ত বাড়বে না। ৮০ টাকা এখনও স্বাভাবিক আছে বলে এই বিক্রেতা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বেশি না। আগে ৫০-৬০ টাকা ছিল এখন ৮০ টাকা হয়েছে। অস্বাভাবিক নয়। এক মণ কাঁচা পেঁয়াজ কিনলে ৮-১০ কেজি শুকিয়ে যায়। কিছু দাগি-পচা বের হয়। এ জন্য এই সময়ে একটু দাম বেড়ে থাকে।

বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই উল্লেখ করে এই বিক্রেতা বলেন, দাম কিছুটা বেড়েছে। এলসি করে আনা হলে দামে কিছুটা প্রভাব পড়বে। এখনও এলসি করে না আনা উচিত। পেঁয়াজের দাম এখনও স্বাভাবিক আছে।

খুচরা বিক্রেতা মো. মামুন বলেন, পেঁয়াজের মৌসুম শেষের পথে। নতুন করে উঠতে এখনো সাড়ে তিন-চার মাস লাগবে। এখন বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আসলে বাজার শিথিল হবে। আমরা ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এক মন পেঁয়াজ কিনলে কিছু বাদ পড়ে। তাতে বেশি লাভ থাকে না। মনে ১০০ টাকা হয়তো লাভ হয়।

সোনাডাঙ্গা কাঁচা বাজারের আল্লাহর দান-১ আড়তের পাইকারি বিক্রেতা ইয়াদ আলী বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেঁয়াজ এখনো রয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ কম আসছে। এ ছাড়া এলসি দেওয়া হয়নি এখনো, আগামী ১৫ তারিখে এলসি দেবে। তখন আবার পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে যাবে। বর্তমানে আমরা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। ১৫ তারিখে এলসির অনুমোদন দিলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং তখন কেজিতে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকা কেজিতে নেমে আসবে।

সোনালী বাণিজ্য ভান্ডারের বিক্রেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এই সিজনে পেঁয়াজের বাজারটা একটু চড়া হয়। আর এই বৃষ্টির সিজনে মালের সংকট হয়। কারণ পেঁয়াজ পঁচনশীল। বৃষ্টি হলে পেঁয়াজ সরবরাহ কমে যায়। তখন বাজারে দাম বেড়ে যায়। তবে এভাবে যদি বাজার চলে তাহলে ক্রেতাদের কিনতে সমস্যা হবে। এখন সরবরাহ বাড়লে বাজার আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মানভেদে ৬২-৭০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে কম হয়। দু-একটা প্রদর্শনী দিলে সেটা চেষ্টা করে তাও ভালো হয় না। শীতকালে বাড়িতে বাড়িতে হয়। তবে মাঠ ফসল হিসেবে এই অঞ্চলে চাষ করা হয় না। আমাদের টাইট মাটি, পেঁয়াজ চাষের জন্য বিলে ১০ মাটি লাগে। আর আমাদের জো আছে দেরিতে। বিভিন্ন কারণে দক্ষিণ অঞ্চলে পেঁয়াজ হয় না। বসত বাড়িতে কিছুটা হয়। তিনি জানান, ফরিদপুর, মেহেরপুর ও নাটোর থেকে খুলনা অঞ্চলে পেঁয়াজ আসে।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top