কিশোরগঞ্জে আখের বাম্পার ফলন, দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকের মুখে হাঁসি
প্রকাশিত:
৩ আগস্ট ২০২৫ ১০:৪৯
আপডেট:
৩ আগস্ট ২০২৫ ১৫:০৬

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় ভাল দামও পাচ্ছেন চাষীরা। আখ চাষ করে উৎপাদন ব্যয় উঠিয়ে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় চাষীদের মুখে হাঁসি ফুটেছে।
তবে আখ চাষীদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আখ চাষীদের কোনো ধরনের সরকারি সহযোগিতা না করার কারণে এ উপজেলায় দিন দিন কমে যাচ্ছে আখের চাষ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম আখ চাষীদের জন্য সরকারি সহযোগিতা না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, সরকারিভাবে আখ চাষে সহযোগিতা না পেলেও কৃষকদের আখ চাষে পরামর্শ দেওয়া হয়।
জানা গেছে, নীলফামারীর ৬টি উপজেলার মধ্যে কিশোরগঞ্জ উপজেলা আখ চাষের জন্য উপযোগী। গত কয়েক বছর আগে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আখের চাষ সবচেয়ে বেশি ছিল। এ উপজেলায় ৯০ থেকে ৯৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। কিন্তু সরকারিভাবে আখ চাষীদের কোনো ধরনের সহযোগিতা না করার গত দুই তিন বছর ধরে তুলনামুলকভাবে আখের চাষ কমে গেছে।
উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কিশোরগঞ্জে মাত্র ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, এটেল ও এটেল দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য উপযুক্ত। কিশোরগঞ্জ উপজেলার বেশির ভাগ জায়গায় বেলে আবার কোথাও কোথাও বেলে দোআঁশ ও এটেল মাটি গঠিত। এই দুই ধরনের মাটিই কৃষি কাজের জন্য উপযোগী।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে উপজেলার মাগুড়া সিঙ্গেরগাড়ী, বড়ভিটা, চাঁদখানা, কাঁটগাড়ী ও বাহাগিলি ইউনিয়নের ঝলঝলিপাড়া গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বেশি দাম পাওয়ায় খুশি হয়েছেন চাষীরা।
চাঁদখানা ইউনিয়নের কাটগাড়ী পাইকারপাড়া গ্রামের জিয়ারুল হকের স্ত্রী শরীফা বেগম বলেন, আমার স্বামী বাইরে কাজ করে। তাই আমি নিজেই আমার ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি।
আখ চাষে উৎপাদন ব্যয় কত হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ২০ শতক জমিতে চারা বাবদ আমার ব্যায় হয়েছে ২৬শ' টাকা। সার, কীটনাশক, জমিচাষ, শ্রমিকসহ আমার সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার টাকা।
বর্তমানে ২০ শতক জমিতে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার আখ হবে। সে অনুযায়ী প্রতিপিস আখ ১২ টাকা পিস হলে ৫০ থেকে ৫১ হাজার
টাকায় বিক্রি করতে পারব।
একই গ্রামের আজিজুল, শুকারু, জাহিদুল ইসলামসহ অনেকেই বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আখের দাম বেশি। প্রতি বিঘায় আখ চাষ করতে আমাদের ব্যয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। বর্তমানে আখের যা ফলন সে হিসাবে এবার উৎপাদন ব্যয় উঠিয়ে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবো।
বাহাগিলি ঝলঝলি পাড়া গ্রামের আখ চাষী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। আমি প্রতিবছর আখ চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করে থাকি।
তিনি বলেন, আখ আমাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে হয়না। পাইকাররা জমি থেকেই প্রতি পিস আখ ১২ টাকা থেকে ১৩ টাকায় কিনে নিয়ে যায়। এ কারণে আখ বিক্রির কোনো চিন্তা থাকেনা।
মাগুড়া সিঙ্গেরগাড়ী গ্রামের আখ চাষী সবুর মিয়া বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ধান, আলু,মরিচ পেয়াজ, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসলের জন্য সরকারি ভর্তুকি থাকলে আখ চাষে ভতুর্কিতো দূরের কথা আখ চাষের জন্য যে পরামর্শটুকু দরকার কৃষি অফিস থেকে তাও দেওয়া হয়না।
তিনি দাবি করেন, সরকারিভাবে সহায়তা পেলে কিশোরগঞ্জের কৃষকরা আখ চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারত।
উপজেলা কৃষি অফিসার লোকমান আলম স্বীকার করেছেন যে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় আখ চাষের জন্য সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা করা হয়না। তবে তিনি বলেছেন, কৃষকদের আখ চাষের জন্য সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আগামীতে সরকারিভাবে আখ চাষীরা যাতে সহযোগিতা পায়। সে জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: