রাঙামাটিতে চাহিদার শীর্ষে পাহাড়ি দেশি গরু
প্রকাশিত:
৪ জুন ২০২৫ ১৬:৫৮
আপডেট:
৬ জুন ২০২৫ ১৩:৪৭

কাপ্তাই হ্রদের বুক চিরে পাহাড়ি বিভিন্ন এলাকা থেকে ইঞ্জিনচালিত বোটে ট্রাক টার্মিনালের গরুর হাটে আনা হচ্ছে পাহাড়ি দেশি গরু। এই চিত্র এখন নিত্যদিনের। গরুগুলো সারা বছর পাহাড়ি এলাকা চষে বেড়ায়। গোখাদ্য হিসেবে স্থানীয়ভাবে জন্মানো সবুজ ঘাস খাওয়ানোর ফলে গরুগুলোর দৈহিক গঠন যেমন সুন্দর, তেমনি এর মাংসে চর্বিও কম থাকে। ইনজেকশন কিংবা রাসায়নিক কোনো উপাদান এদের দেওয়া হয় না। যার ফলে কোরবানির পশুর হাটে এই গরুর চাহিদা এখন তুঙ্গে।
বৈরী আবহাওয়াতেও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। জেলার হাটগুলোতে বিভিন্ন জাতের গরু তোলা হলেও ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে পাহাড়ি দেশি গরু। যা ‘লাল চাটগাঁইয়া গরু’ হিসেবে পরিচিত। নজর কাড়া রঙে এই জাতের গরু দেখতে যেমন সুন্দর, চর্বিমুক্ত হওয়ায় এর স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও কম। তেমনি চমৎকার দৈহিক গঠনের কারণে কোরবানির হাটে গরুগুলো ক্রেতাদের সহজেই চোখে পড়ে।
জেলা শহরের একমাত্র কোরবানির পশুর হাট পৌর ট্রাক টার্মিনাল হাটের নিচে কাপ্তাই হ্রদের ঘাটে বোট ভিড়তেই বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যাপারীরা গরুর দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন। কোরবানি উপলক্ষ্যে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ ট্রাক পাহাড়ি গরু বিভিন্ন জেলায় নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় হাটেও রয়েছে এই জাতের গরুর কদর। রেড চিটাগাং জনপ্রিয় হওয়ার একটি বিশেষ কারণ হলো এর মাংস খুবই সুস্বাদু এবং পাহাড়ের নির্মল পরিবেশে বেড়ে ওঠা। এসব গরুর মাংসে চর্বির পরিমাণ কম।
সুবলং বাজার থেকে গরু নিয়ে আসা খামারি মানিক জয় চাকমা বলেন, আমরা এই গরুগুলো পাহাড়ি চড়িয়ে বড় করি। এদেরকে কোনো ধরনের মোটাতাজাকরণ ট্যাবলেট খাওয়ানো হয় না। গরুগুলো প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়ায় মাংস খুব সুস্বাদু হয়।
আরেক খামারি সুকুমার খীসা বলেন, পাহাড়ি গরুগুলোকে শুধু কৃত্রিম ওষুধ ব্যতীত অন্য কিছু খাওয়ানো হয় না। এরা পাহাড়ে চড়ে ঘাস খেয়ে বড় হয়, আর আমরা কুড়া খাওয়াই। এই গরুগুলো দেখতে সুন্দর আর প্রাকৃতিকভাবে বড় হওয়ায় ক্রেতারা পছন্দ করেন।
গরুর ব্যাপারী আজগর আলী বলেন, আমি এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে গিয়ে চট্টগ্রামে বিক্রি করি। আমাদের ওদিকে পাহাড়ি গরুর চাহিদা বেশি। কারণ এই গরুগুলোতে কোনো চর্বি হয় না। ইনজেকশনও দেওয়া হয় না।
আরেক ব্যাপারী সালাম মিয়া বলেন, আমি এখান থেকে গরু কিনে নিয়ে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া মরিয়মনগর বিক্রি করি। চর্বি না থাকায় এখানকার গরুগুলোর চাহিদা অনেক বেশি। আমি ১৩টি গরু নিয়ে যাচ্ছি।
পৌর ট্রাক টার্মিনাল হাটে গরু কিনতে আসা হামদান আল নোমান বলেন, এই বছর গরুর দাম খুব বেশিও না আবার কমও না। গত বছরের মতই মনে হচ্ছে। কয়েকটা গরু দেখেছি, দামদরে হচ্ছে না। বিকেলের দিকে আবার আসবো।
বিক্রেতা সবুর আলী বলেন, আমি মোট ৫টা দেশি গরু এনেছি, ৪টা বিক্রি হয়ে গেছে, আর একটা আছে। এটাও দামাদামি চলছে। রাঙামাটির বাজারে দেশি গরুরই চাহিদা বেশি।
আরেক বিক্রেতা আবু বক্কর বলেন, ক্রেতারা দামাদামি করছেন, কিন্তু কিনছেন না। বাজারের অবস্থা খুব বেশি সুবিধার না। আমি সবগুলো দেশি গরু এনেছি।
রাঙাামটি পশুর হাটের ইজারাদার মো. দিদারুল আলম বলেন, আমাদের হাটে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু রয়েছে। বৃষ্টির কারণে গত কয়েকদিন বিক্রি কম থাকলেও, আজ থেকে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ৭-৮টি পশুর গাড়ি রাঙামাটি থেকে বাইরে যাচ্ছে। বর্তমানে হাটে হাজার খানেকের মতো গরু আছে, বিক্রি হয়েছে প্রায় আড়াইশোর মতো।
রাঙামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা. তুষার কান্তি চাকমা বলেন, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের জন্য লাল চাটগাঁইয়া গরু, যেটাকে আরসিসি গরু বলা হয় সেটি খুবই বিখ্যাত। এই গরুগুলো দেখতে সুন্দর এবং এদের মাংসগুলো খুবই সুস্বাদু। এরা দুধও বেশি দেয়। ফলে এই গরুগুলোর চাহিদা রয়েছে সারাদেশে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, আসন্ন কোরবানিতে রাঙামাটিতে ১৯টি হাটের মাধ্যমে পশু কেনাবেচা হচ্ছে। এ বছর জেলায় পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬০টি। এর বিপরীতে বিভিন্ন খামারে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কোরবানির পশু প্রস্তুত আছে ৬২ হাজার ৮৮৩টি।
সম্পর্কিত বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: