নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেল সেতুর চার পিলার
 প্রকাশিত: 
                                                ২৭ জুন ২০২৪ ১১:৪১
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৬
                                                
 
                                        গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার শাখা নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর একটি অংশ দেবে গেছে। সম্প্রতি উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা খেয়াঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের গাফিলতি ও দায়সাড়া কাজের জন্য সেতুটির এ অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় লোকজন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা ঘাট থেকে নৌকাযোগে নদী পারাপার হতেন। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল একমাত্র নৌকা। স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকা ঘাট এলাকায় একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের মে মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ।
বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরবাসীর জন্য এই সেতুটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত মাধ্যম। এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হলেও সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্ল্যাবের পরিবর্তে কাঠ দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় লোকজন যাতায়াত শুরু করেন ফলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটির চারটি পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় প্রকল্পটির কার্যকারিতা এবং পরিকল্পনার বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ব্রিজটির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে বেলকা ও হরিপুর ইউনিয়নের চরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তাদের দৈনন্দিন চলাচল এবং ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থী, রোগী এবং অন্যান্য জরুরি পরিষেবা গ্রহণকারী জনগণ চরম অসুবিধার মধ্যে পড়েছে।
মানিক মিয়া নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এই ব্রিজটি ছিল আমাদের জন্য স্বপ্নের মতো। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমাদের জীবনে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই ব্রিজ দিয়ে কীভাবে চলাচল করব তা নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।
বেলকা এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আগে এখানে কোনো সেতু ছিল না। নৌকা দিয়ে পার হতে হতো সবাইকে। এতে সাধারণ মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হতো। একটি সেতু নির্মিত হচ্ছে দেখে খুশি হয়েছিলাম। এখন দেখছি, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই এটি দেবে গেছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ছানা মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিন ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নাফ বলেন, আমরা সেতুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছি এবং দ্রুত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বর্তমানে এটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য অনুপযুক্ত।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, লোকমুখে বিষয়টি শুনেছি। স্থানীয় জনগণের জীবনের ওপর একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: