হাসপাতালের লিফটে আটকা ‘৪৫ মিনিট’, অবশেষে রোগীর মৃত্যু
 প্রকাশিত: 
                                                ১২ মে ২০২৪ ১৫:২৪
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৩৬
                                                
 
                                        গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের লিফটে আটকা পড়ে এক নারী রোগীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার (১২ মে) সকালে হাসপাতালের ৩নং লিফটে এ ঘটনা ঘটে।
পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে লিফটে আটকে পড়া রোগীর মরদেহসহ অন্যদের উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে নিহতের স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে লিফট অপারেটরদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ করেছেন।
মৃত মমতাজ বেগম (৫০) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন বিএসসি’র স্ত্রী।
মৃতের ভাগ্নে খন্দকার শাহদত হোসেন সেলিম বলেন, আমার মামী মমতাজ বেগম শ্বাস কষ্ট ও হৃদরোগ নিয়ে রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ওই হাসপাতালের ১১ তলার মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন। পরে তাকে সেখানকার চিকিৎসকরা তাকে একই ভবনের ৪র্থ তলায় থাকা কার্ডিলজি বিভাগে ট্রান্সফার করেন। মামী হাঁটা চলা করতে পারলেও তখন তাকে দ্রুত হৃদরোগ বিভাগে নেওয়ার জন্য ট্রলিতে উঠানো হয়। পরে মামীসহ তার ছেলে আব্দুল মান্নান, মেয়ে শারমিনসহ ও আমি হাসপাতালের ৩নং লিফটে উঠি। কিন্তু লিফটি হাসপাতালের ৯ম ও ১০ তলা মাঝমাঝি থাকা অবস্থায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লিফটি হঠাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে যায়। তখন আমি লিফটে থাকা মোবাইল নম্বরে একাধিক ব্যক্তিকে বার বার ফোন করলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনি। উল্টো আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে।
এমতাবস্থায় রোগী ছটফট করতে থাকলে আবারো অপারেটরদের ও ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। আটকে থাকার ৪৫ মিনিট পর এক পর্যায়ে কয়েকজন অপারেটর দরজা কিছুটা ফাঁক করে আবার দরজা বন্ধ করে তারা চলে যায়। এসময় অনেক কষ্টে আমরা তিনজন বেরিয়ে আসতে পারলেও মামীকে বের করা সম্ভব হয়নি। পরে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল যায়। কিন্তু ততক্ষণে লিফটের ভেতরই মামী শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা দরজা খুলে মমতাজ বেগমের মরদেহ উদ্ধার করেছে। যদি সঠিক সময়ে তাকে উদ্ধার করা হতো তাহলে হয়তো বাঁচানো সম্ভব যেত। এর আগে ৪ মে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার কারণে হাসপাতালের ১২ তলার ভেতরের দেয়াল ও মেঝের মধ্যে থাকা ফাঁকা স্থান দিয়ে এক রোগী ১০ তলায় পড়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সপ্তাহ না ঘুরতেই আবার আরেক রোগী মারা গেলেন। এসব দায়িত্ব অবহেলা জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তিনি।
লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর খবরের সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে হাসপাতালে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে রোগী মমতাজ ও তার কয়েক স্বজনসহ হাসপাতালের লিফটে ৯ম তলায় আটকা পড়েন। পরে লিফটের অপারেটর ও জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা লিফটি ফাঁক করে ঘটনার ১৫/২০মিনিট পরে মমতাজের লাশ ও তার স্বজনদের উদ্ধার করেছে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে। তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় কারো ঘাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: