বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


নারায়ণগঞ্জের আদালতে মামুনুল হক


প্রকাশিত:
২৫ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৬

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ১২:৩৫

ছবি সংগৃহিত

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডে হেফাজতে ইসলামের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় নবম দফায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে আনা হয়েছে।

এদিন তার বিরুদ্ধে মামলার বাদীর ছেলে আব্দুর রহমান ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হলেও দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত।

মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কড়া নিরাপত্তায় তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের নাজমুল হক শ্যামলের আদালতে হাজির করা হয়।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট রকিবুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার ছেলে আব্দুর রহমান ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণের কথা থাকলেও দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। এখণ পর্যন্ত ধর্ষণ মামলায় মোট ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আজ মামলার ১৯ নম্বর সাক্ষী সোনারগাঁ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হক ও ২০ নম্বর সাক্ষী মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণার ঢাকার বাড়ির মালিক মোশারফ হোসেন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। ওই দিন চার্জশিটের ২৩ নম্বর সাক্ষী সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আনিসুর রহমান, ২৪ নম্বর সাক্ষী এএসআই কর্ণকুমার হালদার ও ২৫ নম্বর সাক্ষী এএসআই শেখ ফরিদ সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। এই মামলায় আগামী ৬ জুন পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সোনারগাঁয়ের রয়্যাল রিসোর্টে মামুনুল হকের আপত্তিকর অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। আজকের সাক্ষী এসআই আজিজুল হক আদালতে বলেন, ঘটনার দিন তিনি সোনারগাঁ থানার অন্যান্য কর্মতর্তাদের সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে মামুনুল হক বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন ও পরবর্তীতে বিয়ের কথা বললে মামুনুল হক তাকে বিয়ে করবেন না বলে জানান। এ বিষয়ে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী।

এদিকে অপর সাক্ষী মামলার বাদীর ঢাকার কলাবাগান ২৩/৩ বাড়ির মালিক মোশারফ হোসেন আদালতে বলেন তিনি ঘটনার বিস্তারিত বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে ও ফেসবুকে দেখেছেন। সেখানে তিনি বিয়ের প্রলোভনে ঝর্ণাকে ধর্ষণের বিষয়টি অবগত হয়েছেন। তাই বাদীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ আদালতে ক্রমাগত পরিষ্কার হচ্ছে। মামুনুল হক মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে নিজের স্ত্রী দাবি করলেও তিনি তা অস্বীকার করেন। এছাড়া আসামির আইনজীবী ও আসামি আজ পর্যন্ত বিয়ের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। তাই সমস্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক শেষ হলে মামলার বাদী জান্নাত আরা ঝর্ণা ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশা করি।

এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী ওমর ফারুক নয়ন বলেন, আজ আদালতে মোট পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন দেওয়া ছিল। সাক্ষীরা উপস্থিত না থাকায় দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন আদালত। আমরা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার ১৬৪ ধারার জবানবন্দির সঙ্গে বর্তমানে সাক্ষীর সাক্ষ্যতে কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা সাক্ষীদের সাক্ষ্যতে সম্পূর্ণ অসামঞ্জস্যতা দেখতে পেয়েছি। সেদিন ঘটনাস্থলে আসামি মামুনুল হককে রয়্যাল রিসোর্টের ৫০১ নং কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। যা বিভিন্ন মিডিয়াতে এসেছে। কিন্তু আজকে এএসআই আজিজুলকে আমরা জেরা করলে তিনি বলেন আসামি মামুনুল হককে তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিচে নিয়ে আসছিলেন, যা অসত্য ও হাস্যকর। এটি একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা।

তিনি বলেন, আসামি মামুনুল হক একজন দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এই মামলায় আসামি করা হয়েছে। আমরা যদি সমস্ত সাক্ষীদের জেরা করতে পারি এবং এই মামলার চুলচেড়া বিশ্লেষণ হয় তবে আসামি মামুনুল হক বেকসুর খালাস পাবেন।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আদালত চত্বরে মামুনুল হকের সমর্থকরা ভিড় করে স্লোগান দিতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে আবার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মামুনুল হককে আটক করেন। পরে স্থানীয় হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এসে রিসোর্টে ভাঙচুর করে তাকে ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার পর তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশের নজরদারিতে রাখা হয় হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হককে। পরে ১৮ এপ্রিল পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে ওই মাদরাসা থেকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেন ওই নারী। তবে শুরু থেকেই তিনি জান্নাত আরা ঝর্ণাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করে আসছেন।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top