বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১

Rupali Bank


পার্কিং টাইলসের ব্যবসায় ভাগ্য বদল রিয়াজুলের


প্রকাশিত:
২৪ জানুয়ারী ২০২৩ ২২:১৪

আপডেট:
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৫৭

ছবি সংগৃহিত

যশোরের চৌগাছা উপজেলার সরুপদাহ ইউনিয়নের আন্দারপোতা গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম। ২০১৫ সালে চুয়াডাঙ্গার ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর চাকরির আশায় ঘুরেছেন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। দীর্ঘ ছয় বছরেও চাকরি না পেয়ে নিজেই কিছু করার পরিকল্পনা করেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন বড় কিছু কোম্পানির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ধারে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে তৈরি করেন পার্কিং টাইলসের কারখানা। চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের পাশে হাজরাখানা গ্রামে সম্পূর্ণ গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে তোলেন কারখানাটি। এর নামকরণ করেন রাইসা টাইলস ফ্যাক্টরি।

গত এক মাস ধরে এ কারখানায় প্রতিদিন তৈরি হচ্ছে উন্নত মানের পার্কিং টাইলস। অন্যান্য কোম্পানির টাইলসের তুলনায় অধিক টেকসই ও মজবুত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পার্কিং টাইলস কিনতে আসেন পাইকাররা। আবার অনেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও অর্ডার করেন। কারখায়নায় ১০ জন শ্রমিক টাইলস তৈরিতে শ্রম দেন। উদ্যোক্তা রিয়াজুলের আত্মকর্মসংস্থানে সৃষ্টি হয়েছে ১০টি হতদরিদ্র পরিবারের কর্মসংস্থান। শ্রমিকদের বেতন ও কারখানার ব্যয় বাদ দিয়ে রিয়াজুলের এখন মাসিক আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা।

উদ্যোক্তা রিয়াজুল ইসলাম বলেন, মাস্টার্স শেষ করার পর ছয় বছর চাকরির পেছনে ছুটেছি। চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। এর মধ্যে আমার বাবাও মারা যান। সংসার চালানো নিয়ে আমি বড় দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই।

এরপর বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পরামর্শ করি যে নিজে কীভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার আরও কিছু লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা যায়। এ ধরনের চিন্তা ভাবনা করার এক পর্যায়ে পার্কিং টাইলসের কারখানা করার সিদ্ধান্ত নেই। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কারখানা তৈরির কাজ শেষ করে গত এক মাস হয়েছে টাইলস উৎপাদন শুরু করেছি। সফলভাবে টাইলস তৈরি করতে পারছি। আমার এখানে পার্কিল টাইলসের প্রতি পিসের পাইকারি মূল্য ৩৫ টাকা ধরা হয়েছে। যেটি অন্যান্য কোম্পানির পার্কিং টাইলসের তুলনায় কম দামের এবং ১২ বছরের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারেন্টি দেওয়া হচ্ছে।

রিয়াজুল আরও বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল আমার আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে আরও কিছু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এখন আমার কারখানায় ১০ জন শ্রমিক আছে। আরও লোকবল বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে টাইলসের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমার কাছ থেকে পার্কিং টাইলস সংগ্রহ করছে, এতে আমার উৎসাহ বাড়ছে।

সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে এ পার্কিং টাইলস তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সিমেন্ট, সারি বালু ও নুড়ি পাথর। ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক দুটি ভাইব্রেটর মেশিন।

রিয়াজুলের টাইলস কারখানার শ্রমিক জসিম উদ্দিন বলেন, এর আগে মাঠে কাজ করতাম। টাইলস কারখানা হওয়ার পরে এখানে বেতনে কাজ করছি। ১০জন এখানে শ্রম দিয়ে টাইলস উৎপাদন করি। এখন আমাদের পরিবারও ভালো আছে আমরাও খুশি।

সেলিম হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, রিয়াজুল ভাইয়ের উদ্যোগে তিনি যেমন সাবলম্বী হয়েছেন, তেমনি আমাদের ১০টি লোককেও তিনি সাবলম্বী করেছেন। বেকার যুবকেরা এমন আত্মকর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিলে বেকারের সুবিধা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, রিয়াজুলের বাবা মারা যাবার পর সে আরও হতাশ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে যে উদ্যোগটি নিয়েছে সেটি অত্যান্ত চমৎকার উদ্যোগ। গত এক মাসে তার ভাগ্যের যেমন বদল ঘটেছে তেমনি আর দশটা লোকের কর্মসংস্থান হওয়ায় তাদেরও ভাগ্যের বদল ঘটেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা জামিল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে এখনো অনেক বেকার আছে। অনেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে চাকরির পেছনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। তারা যদি চাকরির পেছনে না ছুটে নিজেরা কিছু করার চেষ্টা করে তাহলে নিজেই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। আর এ সকল কর্মসংস্থান দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখে।

উদ্যোক্তা রিয়াজুলের পার্কিং টাইলসের কারখানা থেকে এখন মাসিক আয় প্রায় দেড় লাখ টাকা। তিনি এখন স্বপ্ন দেখছেন চায়না থেকে পাথর কাটা মেশিন আমদানি করে নিজ কারখানায় উন্নতমানের মোজাইক টাইলস তৈরির। সরকার ও ব্যাংকের সহোযোগিতা পেলে দ্রুত এর পরিধি বাড়ানো যাবে বলে মনে করছেন তিনি।

সরুপদাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল কদর বলেন, আমার ইউনিয়নের ছেলে রিয়াজুল। ছোট থেকে আমাদের দেখা, সে খুব সৎ এবং উন্নয়নশীল। যে টাইলস কারখানাটি করেছে সেটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং সব থেকে বড় বিষয় হচ্ছে এখানে আরও লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। আমি তার সাফল্য কামনা করি।


সম্পর্কিত বিষয়:


আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top