এবার আমচাষিদের মাথায় হাত
 প্রকাশিত: 
                                                ৭ মে ২০২৪ ১৮:৪০
 আপডেট:
 ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:০৩
                                                
আমের রাজধানী নামে খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে আমের উৎপাদনে খরা ও আমের বাগান বিক্রি না হওয়ায় আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
জানা গেছে, এবার জেলায় আমের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু নানা প্রতিকূলতার মাঝে আমের উৎপাদন প্রায় অর্ধেকের বেশি নিচে নেমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারপর আবার দীর্ঘদিন যাবত প্রচণ্ড দাবদাহে চলায় আমের অবস্থা খারাপ। যা সামান্য আম আছে তাও আবার কেনাবেচা না হওয়ায় আমচাষি ও আম ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
শিবগঞ্জ উপজেলার আমচাষি আরিফুল ইসলাম (৫০) বলেন, গত ২৫ বছর ধরে আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মৌসুমে গাছে আম ধরিয়ে অগ্রিম বাগান বিক্রি করি। কিন্তু এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও বাগান বিক্রি করতে পারিনি। কারণ বাগানে আশানুরূপ আমের গুটি আসেনি। এতে হতাশা হয়ে পড়েছি।
শুধু আরিফুল ইসলাম নয় জেলার অধিকাংশ আমচাষির অবস্থা এমন। আরিফুল ইসলাম বলেন, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আম ব্যবসা করে আসছি। প্রতিবছর গাছে আম ধরিয়ে এ সময়ে বাগান বিক্রি করি। কিন্তু এবার গাছে নেই পর্যাপ্ত আমের গুটি। তাই ক্রেতাও নেই। আর এবার বেড়েছে কীটনাশক-বালাইনাশক খরচ। আম যদি না হয় এসব কৃষি পণ্যের টাকা আমি দিব কোথায় থেকে। এমন কি যে শ্রমিক আমরা আগে পেতাম ৩০০ টাকায়। এখন শ্রমিকের মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।
পুকুরিয়া এলাকার আমচাষি সুজা মিয়া বলেন, আমার খিরসাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় সাতবিঘা জমিতে আম বাগান রয়েছে। প্রতিবছর আম ফলিয়ে গাছেই বিক্রি করি। কিন্তু এবার বাগানে নেই পর্যাপ্ত আম। এতে দীর্ঘ সময় চেষ্টা করেও পাচ্ছি না ক্রেতা।
কানসাট আব্বাস বাজার এলাকার বাসিন্দা রহিদুল ইসলাম। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, জন্মসূত্রে ১৫ বিঘা আম বাগান পেয়েছেন। একটি মাত্র সন্তান বিদেশে থাকে। এ জন্য শ্রমিকদের দিয়ে গাছে আম ধরিয়ে এ সময় অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু এবার ক্রেতা পাচ্ছেন না তিনি। এতে অযত্নে পড়ে আছে তার ১৫ বিঘা আম বাগান।
শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আম বাগান মালিক রাকিমুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবাদে আমরা পরিবার নিয়ে এক যুগ ধরে রাজশাহীতে বসবাস করি। জন্মসূত্রে পাওয়া এলাকায় ১০ বিঘার বেশি জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ আম গাছগুলোতে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচর্যা কতে আম ধরিয়ে এ সময় বিক্রি করি। আমাদের বাড়িতে ক্রেতারা এসে কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবার কোনো ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। শুনছি বাগানে নাকি আম নেই।
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাগানে কম মুকুল এসেছিল। আর ফুটন্ত মুকুলের সময়ে বৃষ্টি হয়েছে। এতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় এবার ৭০ শতাংশ গাছেই আম নেই। এজন্য ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না তিনিসহ জেলার শত শত আমচাষিদের দাবি তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হোক। তাহলে কিছুটা রক্ষা পাবো আমরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, এবার যে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। সামনে আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছে। যেমন কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টি এসব হতে পারে। এমনটা হলে আমের উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে।



 
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                             
                                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: