সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টির প্রবণতা শুরু, তবু হিট অ্যালার্ট কেন?


প্রকাশিত:
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২১

আপডেট:
১৩ মে ২০২৪ ১০:৫২

ছবি- সংগৃহীত

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী ইতিমধ্যে বৃষ্টির প্রবণতা শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে এর মধ্যেই নতুন করে আরও তিনদিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে সংস্থাটি। তারা বলছে— হিট অ্যালার্টের এই সময়ে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে মানুষের মধ্যে অস্বস্তি বাড়তে পারে।

৭৫ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এ বছর। অর্থাৎ টানা ২৮ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা ইতিহাসে প্রথম। এই সময়ের মধ্যে টানা পাঁচবার হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলছেন— আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা ও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে দেশের ওপর চলমান দাবদাহ বা হিট ওয়েভ আরও ৭২ ঘণ্টা বিলম্বিত হতে পারে।

এর কারণ হিসেবে বলা হয়, ঢাকাসহ অন্তত ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে ২৮ দিন ধরে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। একই সাথে দিনের গড় তাপমাত্রাও কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়েছে। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী— শনিবার থেকেই সিলেটসহ কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী মে মাসের শুরুতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কেমন যাবে আগামী তিনদিন?

আবহাওয়া বিভাগ বলছে— আজ থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু’এক জায়গায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে কোনো কোনো জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টিও হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য জায়গার আবহাওয়া শুষ্কই থাকতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আর তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে। এছাড়া আরও অনেকগুলো জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের যে তাপপ্রবাহ বইছে তা অব্যাহত থাকতে পারে। একই সঙ্গে আগামীকাল সোম ও মঙ্গলবার চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এরপর বৃষ্টিপাত ভালো করে হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমতেও পারে।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। এর বাইরে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও যশোরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি ছিল।

বৃষ্টির প্রবণতা শুরু, তবু হিট অ্যালার্ট কেন?

চলতি সপ্তাহের শেষ থেকেই উত্তর পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশা প্রকাশ করছে আবহাওয়া বিভাগ।

সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলছেন, আবহাওয়ার বিভিন্ন মডেল পর্যালোচনা ও তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে দোসরা মে বা তারপর থেকে বৃষ্টিপাত হবে বিভিন্ন জায়গায়। স্থান ও সময়ের হেরফের হতে পারে সামান্য তবে এটিই হবে।

যদিও চতুর্থ দফার হিট অ্যালার্ট জারির পর আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদও একই ধরনের সম্ভাবনার কথা জানান। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ২৯ এপ্রিলের থেকেই সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে; তাতে আগামী মাসের শুরুতে মোটামুটি ভালোই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।

শনিবার সিলেট এলাকায় ঝড়ো বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। সে কারণে সিলেটের তাপমাত্রা কমেও এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ও সর্বনিম্ন ২২ দশমিক ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সেখানে। আজ ও কাল আরও কিছু এলাকাতেও বৃষ্টি হতে পারে।

তিনদিনের হিট অ্যালার্টের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলছেন— দেখা যাচ্ছে টুকটাক বৃষ্টি হলেও তাপপ্রবাহ চলতি মাসজুড়েই থাকছে। সে কারণেই হিট অ্যালার্ট দেওয়া হয়েছে। ১/২ তারিখ থেকে বৃষ্টি হলেও তার আগের তিনদিন তাপপ্রবাহ একই থেকে যাচ্ছে।

‘উষ্ণতম বছর’

তবে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহকে সাধারণ ঘটনা হিসেবে দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন— প্রায় প্রতিবছর এপ্রিল মাসে গড়ে দুই-তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হয় আমাদের দেশে। এক থেকে দুটি তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহও বয়ে যায়।

আবহাওয়াবিদরা ধারণা করছেন, তবে এবছর তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হওয়ায় ইতিমধ্যেই তিনটি হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহেও নতুন হিট এলার্ট জারি করতে হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ শাহ আলম বলেন, মূলত সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। যেখানে এপ্রিল মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে এ বছর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে গড় তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে। এজন্যই সারাদেশে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে।

তবে এ বছরের তাপপ্রবাহের ব্যাপ্তিকাল বিগত বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়াবিদ শাহ আলম তাদেরই একজন। তিনি বলেন, সামনে গড় তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকি তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকলে এটি দেশের উষ্ণতম বছরও হতে পারে।

উদাহরণ হিসেবে ২০২৩ সালকে দেশের উষ্ণতম বছর হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। সে বছর একটানা তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলার রেকর্ড হয়েছিল।

এত তাপপ্রবাহের কারণ কী?

আবহাওয়া অফিসের কয়েকদিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এর কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা জানান, ওই অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। এসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। সাধারণত এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করে।

ড. মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া ও রাজশাহী হয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রাকে গরম করে দেয়।

এই আবহাওয়াবিদ মনে করেন— আন্তঃমহাদেশীয় বাতাসের চলাচল ও স্থানীয় পর্যায়েও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে দেশব্যাপী এবছর তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি থাকতে পারে।

তিনি বলেন, বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে- ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন এবং হার বেশি পেতে যাচ্ছি। এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। দেশের তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতিতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ছোঁয়া লেগেছে।

এছাড়া বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া, ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া এবং শিল্পায়ন ও নগরায়ন বেড়ে যাওয়ার কারণেও সার্বিকভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা



আপনার মূল্যবান মতামত দিন:




রিসোর্সফুল পল্টন সিটি (১১ তলা) ৫১-৫১/এ, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
মোবাইল: ০১৭১১-৯৫০৫৬২, ০১৯১২-১৬৩৮২২
ইমেইল : [email protected]; [email protected]
সম্পাদক : লিটন চৌধুরী

রংধনু মিডিয়া লিমিটেড এর একটি প্রতিষ্ঠান।

Developed with by
Top